pagead2.googlesyndication.com আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা ও এক টুকরো ইতিহাস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা ও এক টুকরো ইতিহাস

Nir
2

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। ১৯৫২ সালে এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে ঢাকার রাজপথে নেমেছিল বাংলার তরুণ দামাল ছেলেরা। তাঁরা তাদের প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছিলো আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা

একসময়, আমাদের এই সবুজ শ্যামল বাংলাদেশটির নাম কিন্তু বাংলাদেশ ছিলোনা, তখন এর নাম ছিলো পূর্ববঙ্গ। তবে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশের নাম ছিলো বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী। 

 

 একুশে ফেব্রুয়ারির এই দিনটি একই সাথে একটি বেদনার দিন, সেই সাথে গৌরবেরও। 


১৯৪৭ সাল, এই দেশটির নাম পালটে হয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তান। পাকিস্তানী শাসনের অবসন ঘটার পর তাঁরা এ দেশটির নাম রাখে পূর্ব পাকিস্তান। অবশ্যি এ নিয়ে তখন ছিলো নানা বিতর্ক। বাঙ্গালী জাতি, বঙ্গদেশ। মায়ের ভাষা বাংলা। কাজেই নাম তো বাংলাদেশ হওয়ারই কথা। কিন্তু ধর্মের দরুন এ দেশটির নাম হয়ে গেলো পূর্ব পাকিস্তান। ব্রিটিশ শাসনামলের অবসানের পর শুরু হলো পাকিস্তান শাসন।

 

পশ্চিম পাকিস্তান, আয়তনে বেশ বড়, জনসংখ্যাও বেশি। পূর্ব পাকিস্তান আয়তনে বেশ ছোট, জনসংখ্যায়ও অনেক কম। দুই দেশের মাঝে ভারত। ভারতে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যা বেশি। অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে মুসলিম ধর্মালম্বীর সংখ্যা অধিক। তাই দুই দেশ হয়ে গেলো এক। শাসন করতে লাগলো পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার।

 

সেই কত দূরের একটি দেশ, যে দেশের ভাষা ভিন্ন, সংস্কৃতি ভিন্ন, সেই দেশের একটি অংশ হয়ে উঠল পূর্ববঙ্গ। 

 

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এলো সফরে। এসে তিনি লক্ষ করলেন এদেশের মানুষের ভাষার দিকে। ভাবলেন, এটা যেহেতু পাকিস্তানের একটি অংশ, কাজেই এদেশের ভাষাও হওয়া উচিৎ উর্দু। যেমন ভাবা তেমন কাজ, তিনি ঢাকায় এসে একটা সম্মেলনে ঘোষণা করলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তখন বাঙ্গালী জাতি এর প্রতিবাদ করলেন। এ দেশের মানুষ বাঙ্গালী। এদেশে ভিন্ন একটা ভাষার প্রবর্তন হলে, সেই ভাষা শিক্ষা ক্ষেত্রের মাধ্যম হয়ে উঠলে এদেশের মানুষ হয়ে উঠবে একেবারে অশিক্ষিত। অনেকের মতে এটা বাঙ্গালী জাতিকে অশিক্ষিত করার একটি প্রয়াস।

 

তখন থেকে এদেশে ছোট ছোট আন্দোলন হতে লাগল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। ফলে ১৯৫২ সালে এ আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠলো। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ডাক দিলেন হরতালের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তীব্র বিক্ষোভ শুরু হলো। পুলিশ বাহিনী এ আন্দোলন থামাতে সক্ষম না হওয়ার দরুন তাঁরা গুলি ছুড়তে শুরু করলেন বিক্ষোভের দিকে। কিন্তু বাংলার তরুণ ছাত্রযুবকেরা তাতেও পিছু হটেনি। তাদের প্রতিজ্ঞা, নিজের জীবন দিয়ে হলেও তাঁরা তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করবে। কোনোভাবেই তাঁরা তাদের মাতৃভাষাকে কেড়ে নিতে দিবেনা। তখন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালো অনেকেই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে। তারপর এই আন্দোলন থামানো সম্ভব হয়নি। আন্দোলন বাড়ে বৈ যেনো কমে না। ফলে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানী শাষকরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে স্বীকৃতি দেয়। উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা থেকে তুলে নেয়। 

 

১৯৫২ সালের যে স্থানটিতে ভাষা সৈনিকেরা জীবন দিয়েছিলো, তাদের স্মরণে সেখানে গড়ে উঠেছে শহিদ মিনার। যে স্থানটিতে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ আসে, ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানায় ফুল দিয়ে। তাঁরা অমর। প্রতিবছর পালিত হতে থাকে একুশে ফেব্রুয়ারি - বাংলা ভাষা দিবস। 

 

মাতৃভাষা যে এখন শুধুই বাঙ্গালীদের জন্য তা নয়, বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসটি সমগ্র বিশ্বের। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। 

 

আমাদের শৈশবে, স্কুল জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি স্কুলে পালিত হতো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ভোর সকালে আমরা সহপাঠীরা স্কুলে যেতাম ফুল নিয়ে। গ্রাম অঞ্চলে ফুল খুব একটা পাওয়া না গেলে, তখন লাউয়ের ফুল ফটতো, জবা ফুল ফুল ফুটতো, অনেকে লাউফুল নিয়ে যেতো। আমিও নিয়ে গেছিলুম বেশ কয়েকবার। যেসকল স্কুলে ইট সিমেন্টের তৈরি শহিদ মিনার ছিলো না, সেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাঁশের তৈরি শহিদ মিনার বানানো হতো। সারাদিন আয়োজিত হতো নানারকম অনুষ্ঠান। আমরা সকলে যেতাম। 

 

কিন্তু বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি আগের মতো খুব একটা পালন করা হয়না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। অবশ্যি শহর অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয় বটে, কিন্তু শিক্ষার্থী আসেনা খুব একটা। গ্রাম অঞ্চলে তো এই সংখ্যা ক্রমেই কমছে বৈ বাড়ছেনা। 


যারা আমাদের মাতৃভাষা রক্ষার্থে জীবন দিলো, তাদের যেনো মহান সৃষ্টিকর্তা উত্তম মর্যাদা দান করেন। তাদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। সেই সাথে সকলকে মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা। ভাষা হোক উন্মুক্ত।

Post a Comment

2Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!