এক সপ্তাহ বা দুই মাস - মোদাসসের হাসান (গল্প)

WeBlogBD
0


এক সপ্তাহ বা দুই মাস

মোদাসসের হাসান


১.
ঘটনার মর্মটা রাহাত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। সবকিছু যেনো ঘোরের মতো লাগছে তার। তবুও বাকিদের সাথে গিয়ে নিজেও কিছুটা হাত লাগায় কাজে। সব কাজ শেষ করে দু'একজনের সাথে বাসায় চলে আসে সে। লোক ভর্তি বাসা ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে থাকে। সকলেই রওনা দিতে থাকে যারা যার কাজে, যার যার বাসায়। বাসায় নেমে এলো পিনপতন নীরবতা, অথচ আজ সকালেও বাসাটায় কান খোলা রাখা যাচ্ছিলো না। কিছু মানুষ অবশ্য দয়ায় পড়ে থেকে গিয়েছিলো। কিন্তু তারাও একে-একে খেয়ে শুয়ে পড়তে লাগলো বিছানায়...

২.
কিছুক্ষণের মাঝেই জানাজা শুরু হবে। রাহাতের এক দুঃসম্পর্কের মামার জানাজায় তার চেনা অচেনা মিলিয়ে প্রায় অনেকেই এসেছে। রাহাত ফাঁকা রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে করতে অপেক্ষা করতে থাকে। তখন রাত কেবল নয়টা বাজলেও গাড়ি-ঘোড়া বা লোকজনের চলাচল রাস্তায় তেমন নেই বললেই চলে।
সেইদিনের ঘটনার পর থেকে ধীরে ধীরে অনেকেরই আসল রূপ সামনে এসেছে তার। হাঁটতে হাঁটতে সে সম্পর্কেই ভাবতে থাকে রাহাত। ভাবতে থাকে তার সেই আঙ্কেলদের কথা, যাদের সাথে তার বাবার প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আড্ডা হতো। মাঝে মাঝে সেও উপস্থিত থাকতো সেই আড্ডায়। কিন্তু এখন একজনের সাথে মাসেও একবার দেখা হয় না, আর অপর জন যেনো তাকে চিনেই না! তার এক দুঃসম্পর্কের বড় ভাইয়ের সাথে সে কত আনন্দঘন সময় কাটিয়েছে! কিন্তু সেও সময়ের স্রোতে বদলে গেলো, কেড়ে নিতে চাইলো তাদের সর্বশেষ সম্বলগুলো! আসল রূপ! আসল রূপই বটে! যেই খালুর সাথে তাদের বেশী সম্পর্ক ছিলো না, সেই খালুই এখন প্রায় দিন এসে তাদের খোঁজ খবর নিয়ে যায়, হতাশ হতে মানা করে। আবার অনেকে তো....
"তুমি মাস্টারের ছেলে না?" একজনের কথায় রাহাতের ভাবনায় ছেঁদ পড়ে। অন্ধকারে তার চেহারাটা বোঝা যাচ্ছে না। বোঝা গেলেও যে রাহাত তাকে চিনতে পারতো, এমনটাও না! সে শুধু মাথা নাড়িয়ে "জ্বী" বলে আবার হাটতে থাকে। আর মনে মনে বলে, "হাহ, মাস্টারের ছেলে!"
কিছুক্ষণের মাঝেই জানাজা শুরু হয়ে যায়। নামাজ শেষে দাফন-কাফন করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় দু'টো বেজে যায় তার।

৩.
রাহাত নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে তার ঠিক সামনের বস্তুটার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দিনের ঘটনাটি সে অনেকদিন পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারেনি, কিন্তু লোকে ভেবেছে তার কোনো অনুভূতিই নেই! দেরি হলেও সে পেরেছে উপলব্ধি করতে। কিন্তু যতদিনে পেরেছে, ততদিনে আর অনূভুতি প্রকাশের সময় ছিলো না। তবে অন্যরা যখন ঘটনাটির প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে, তখন সে কেবল উপলব্ধি করেছে মাত্র, তাই তার স্মৃতিতেও ঘটনাটি থেকে যাবে অত্যান্ত দৃঢ়ভাবে।
কিছু দিন পূর্বে মারা যাওয়া তার সেই দুঃসম্পর্কের মামার পরিবারকেও সে দেখেছে, তাদের স্বাভাবিক হতে বেশী সময় লাগেনি। ঠিকই তো, কতদিন আর শোক পালন করবে, এক সপ্তাহ? সর্বোচ্চ দুই মাস? রাহাত ঘাড় ঘুরিয়ে তার বাসার দিকে হাঁটা ধরে। পেছনে ফেলে যায় তার জন্মদাতাকে, তার মাথার উপরের ছায়াকে, তিন হাত মাটির নীচে শুয়ে থাকা তার বাবাকে। চলতে চলতে সে বিরবির করতে থাকে একটি কবিতা....

এক সপ্তাহ বা দুই মাস।
এর থেকে বেশী নেই তো আর, শোক পালনের অবকাশ!
পৃথিবীতে যত শান্তিই আনো, অথবা আনো ত্রাস
যত জনেরই করো উপকার, অথবা সর্বনাশ
কতদিন আর?
এক সপ্তাহ বা দুই মাস!

স্মৃতিতে তুমি থাকিবে হয়তো,
বেশী যায়গা জুড়ে অথবা অল্প
যদি হয়ে থাকো চেনা।
হটাৎ হয়তো পড়বে মনে,
নির্জন রাত্রীতে অথবা স্বপনে
অথবা হয়তো মনে পড়বে না।

মনের যতই গভীরে করে থাকো বাস,
সময় তো এটুকুই--
এক সপ্তাহ বা দুই মাস!

বেশী আশা রেখোনা যেনো,
যতই তুমি আপন হওনা কেনো,
যখন হয়ে যাবে লাস,
কতদিন আর?
বড়জোর এক সপ্তাহ, বা দুই মাস!



লেখক - মোদাসসের হাসান (রংপুর)

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!