ঘুরে আসুন সোমেশ্বরী নদী

Nir
2

বাংলাদেশের মায়াবী সুন্দর নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নদী সোমেশ্বরী। এ নদীর রূপ সৌন্দর্য ভারি অপরূপ, ভারি সুন্দর। যেকোনো ভ্রমণপ্রিয় ব্যাক্তির মন ভরিয়ে দিবে, প্রাণ জুরিয়ে দিবে - মায়াবী নদী সোমেশ্বরী। তাইতো ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের বেশ আনাগোনা দেখা যায় এ নদীতে। 

চিত্রঃ সোমেশ্বরী নদী

সোমেশ্বরী নদীর উৎপত্তি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের সীমসাংগ্রী নামক স্থান থেকে। সেখান থেকে সোমেশ্বরী  নদী উৎপত্তি লাভ করে বাংলাদেশের সীমানা পেড়িয়ে প্রবেশ করেছে নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার কুল্লাঘোরা ইউনিয়ন দিয়ে। পূর্বে এই নদীর নাম ছিলো সিমসাং। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করে দূর্গাপুর সদর ইউনিয়নে এসে এ নদী দুটি শাখায় পৃথক হয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

 

সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। শীতকালে এ নদীতে পানি থাকে হাঁটুজল, ফলে নদীর স্বচ্ছ পানিতে হাঁটাহাটি করা যায় এবং উপভোগ করা যায় এ নদীর ভারি অপরূপ সৌন্দর্য। দূরে হাতছানি দেয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পর্বতশ্রেণী। ইচ্ছা করে ছুটে যেতে, একদৌড়ে হয়তো পৌঁছানো যাবে পর্বতশ্রেণীর পাদদেশে। কিন্তু তা কী সম্ভব! এ যে বাংলাদেশের সীমানার ওপারে, মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারকাটার বেড়া। কিন্তু দূরে হয়েছে তো কি হয়েছে! দূর থেকেই বেশ উপভোগ করা যায় সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্য। ইচ্ছা জাগবে একসময় সেই মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশের। তীব্র ইচ্ছা - এবং সেই ইচ্ছা একসময় বাস্তবে রূপ নিবে। দূরের মেঘালয় রাজ্য থেকে দেখবেন নিজ মাতৃভূমির দৃশ্য।

 

শীতকালে সোমেশ্বরী নদীর যৌবন কিঞ্চিৎ ম্লান থাকে, কিন্তু বর্ষায় সোমেশ্বরী তার যৌবন ফিরে পায়। চারদিকে স্বচ্ছ পানিতে ভরে যায়। দূরের মেঘালয় রাজ্যের ঝর্ণাধারা থেকে বেয়ে আসে স্রোত। চারদিক হয়ে ওঠে সবুজ। দূরের পর্বতমালার গাঁ বেয়ে ছুটে চলে মেঘমালা। ভারি অপরূপ সে দৃশ্য, ভারি সুন্দর। 

 

শরতে এ নদীর সৌন্দর্য হয়ে ওঠে ভিন্নরূপ। নদীর ধবধবে সাদা চরে ফুটে ওঠে কাশবন। তেরিবাজার ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন সোমেশ্বরী নদী। দূরের পাহাড়গুলি আপনাকে ডাকবে ইশারায়। দূরের পাহাড়গুলির গাঁ বেয়ে উড়ছে মেঘ। দূর পাহাড়ের মেঘেদের ছোটাছুটি, নদীর চরে ভেসে ওঠা কাশবনগুলি - আপনার মনকে ভরিয়ে দিবে, প্রাণ জুরিয়ে দিবে। হৃদয়ে দোল খেয়ে উঠবে অপরূপ এ সৌন্দর্য।


যেভাবে যাবেন সোমেশ্বরী নদী

সোমেশ্বরী নদী দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে যেতে হবে দূর্গাপুরে। দেশের যেকোনো স্থানেই থাকুন না কেনো প্রথমে আসুন নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর।

 

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস সরাসরি দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এদের মধ্যে রয়েছে সরকার ও জিন্নাত পরিবহণের বাসগুলি। তবে এসব বাস সরাসরি দূর্গাপুরের কথা বললেও দূর্গাপুর পর্যন্ত যায় না। এই বাসগুলি সাধারণত সুখনগরী পর্যন্ত যায়। ঢাকা থেকে বাসে ভাড়া পরবে জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। 


সুখনগরীতে নেমে সেখান থেকে নৌকায় করে ছোট নদী পার হতে হবে দূর্গাপুরে। নদীর ওপার থেকে রিকশা, বাস, টেম্পু, মোটর সাইকেলে করে দূর্গাপুর যেতে হবে। তবে নদীর ওপারের রাস্তা খুব একটা ভালো নয়।


সুখনগরীতে ছোট নদী পেড়িয়ে নদীর ওপার থেকে বাস বা রিকশায় দূর্গাপুর যাওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। রিকশায় গেলে ভাড়া পরবে ৮০-১০০ টাকা এবং মোটর সাইকেলে গেলে ভাড়া পরবে ১০০ টাকা, মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে ১০০টাকায় যেতে পারবেন দুজন। প্রতি জনে পরবে ৫০টাকা।


দূর্গাপুর থেকে নদী পাড় হয়ে ওপারে যেতে হবে। ওপার থেকে অটো কিংবা সিএনজি করে সরাসরি সোমেশ্বরী নদী যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পরবে জনপ্রতি মাত্র ৩০টাকা। 

 

দূর্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরার ক্ষেত্রে চলে আসুন দূর্গাপুরের তালুকদার প্লাজারের সামনে। এখান থেকে ১১টায় এবং ১১.৩০ মিনিটে দুটি নাইট কোচ বাস ঢাকা মহাখালির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ফিরুন দূর্গাপুর থেকে ঢাকা। 

 

যেভাবে যাবেন ঢাকা থেকে ট্রেনে সোমেশ্বরী নদী

ঢাকা থেকে সোমেশ্বরী নদী আসার ক্ষেত্রে প্রথমেই দেশের যেকোন স্থান থেকে ময়মনসিংহ সদরে আসতে হবে। এবং অবশ্যই ভোঁর ৬টার আগেই ময়মনসিংহ পৌঁছাতে হবে। কারণ ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে লোকাল ট্রেনে ২০টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন জারিয়া ঝাঞ্জাইল।

 

আন্তনগর এক্সপ্রেসঃ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আন্তনগর ট্রেনের ক্ষেত্রে হাওর এক্সপ্রেস রাত ১১.৫০ এ কমলাপুর থেকে যাত্রা শুরু করে, ময়মনসিংহ পৌঁছে ৩.৫০ মিনিটে। এ ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। ভাড়া পরবে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে ১৪০ টাকা।  

 

মেইল ট্রেনঃ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আসার ক্ষেত্রে মেইল ট্রেন রাত ৯টায় ভাওয়াল এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে, ময়মনসিংহ পৌঁছে ভোর ৫টায়। ভাড়া পরবে ২য় শ্রেণি সাধারণ সিটে ৩৫টাকা, কমিউটার ৬০টাকা এবং সুলভ সিটের ক্ষেত্রে ৭০টাকা। লোকাল ট্রেনে সময় লাগবে ৬-৭ ঘন্টা।


ময়মনসিংহ থেকে সোমেশ্বরী নদী যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রেনে করে ময়মনসিংহ থেকে জারিয়া ঝাঞ্জাইল পর্যন্ত ২০টাকা ভাড়া পরবে। এ ট্রেনটি ভোর ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে যাত্রা শুরু করে। শেষ গন্তব্য জারিয়া ঝাঞ্জাইল। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন। সেখানে নেমে সিএনজি করে ৪০টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন দুর্গাপুর বাজার। 

 

এছাড়া সরাসরি ময়মনসিংহ টু দুর্গাপুর বাসে করে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০টাকা। তারপর নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে অটো বা সিএনজি করে যেতে পারবেন সোমেশ্বরী নদী মাত্র ৩০টাকা ভাড়ায়।


নোটঃ ঢাকা থেকে সোমেশ্বরী নদী ময়মনসিংহ হয়ে ট্রেনে যাওয়া উত্তম। এতে খরচ হবে অনেক কম।

 

কোথায় খাবেন

সোমেশ্বরী নদী ঘোরার সময় দূর্গাপুর থেকে সাথে হালকা খাবার নিয়ে যাবেন, কারণ এখানে যেখানে সেখানে খাবার পাবেন না। এখানে মোটামুটি মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে মাছ, মাংশ অথবা বকের মাংশ দিয়ে পেট পুরে খেতে পারবেন। 

তবে অবশ্যই দূর্গাপুর বাজারের বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির স্বাদ নিতে ভুলবেন না যেনো। দূর্গাপুরের বালিশ মিষ্টি সমগ্র বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।


কোথায় থাকবেন

দূর্গাপুরে বেশ কিছু মধ্যম মানের আবাসিক হোটেল, ডাকবাংলো ও রেস্টহাউজ রয়েছে। সেখানে রাত কাটাতে পারেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, YMCA রেস্ট হাউজ, YWCA গেস্ট হাউজ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি কালচারাল একাডেমী গেস্ট হাউজ।


দূর্গাপুরের মধ্যম-মানের হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে নদী বাংলা গেস্ট হাউজ, হোটেল সুসং, হোটেল জবা, হোটেল গুলশান, স্বর্ণা গেস্ট হাউজ। এই হোটেলগুলোতে ২০০-৫০০টাকার মধ্যে রাত কাটাতে পারবেন। 


ঢাকা থেকে সোমেশ্বরী নদী ভ্রমণ খরচ

ঢাকা থেকে বাসে সুখনগরী ভাড়া ২৫০টাকা

সুখনগরী থেকে দূর্গাপুর বাস/রিকশা ভাড়া ২০টাকা 

দূর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী ২০টাকা

সকাল - দুপুর - রাতের খাবার ১০০টাকা।

দূর্গানগর থেকে ঢাকা ৩০০

অন্যান্য খরচ = ১০০

সম্ভাব্য মোট খরচ = ২৫০+৩০০+১০০+২০+২০+১০০ = ৭৯০টাকা

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে সোমেশ্বরী নদী

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ট্রেনে ১৪০টাকা ভাড়া

ময়মনসিংহ থেকে  জারিয়া ঝাঞ্জাইল ২০টাকা ভাড়া

জারিয়া ঝাঞ্জাইল থেকে দূর্গানগর সিএনজিতে ৪০টাকা ভাড়া। 

দূর্গানগর থেকে সোমেশ্বরী নদী ৩০টাকা ভাড়া। 

সকাল - দুপুর - রাতের খাবার ১০০টাকা।

অন্যান্য খরচ = ১০০

ঢাকায় ফেরা ৩০০

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে সোমেশ্বরী নদী সম্ভাব্য মোট খরচ = ৩০০+১৪০+৪০+৩০+২০+১০০+১০০=৭৩০

আরও পড়ুন

ঘুরে আসুন কম খরচে চীনামাটির পাহাড়, বিরিশিরি

Post a Comment

2Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!