একদিনে কম খরচে সিলেট ভ্রমণ

Nir
0
একদিনে সিলেট ভ্রমণ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর মধ্যে সিলেট অন্যতম। অনেক পর্যটকের কাছে সিলেট ভ্রমণ প্রিয় একটি স্থান। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটকে করেছে অপরূপ সৌন্দর্যে সজ্জিত। সিলেট জেলার আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য সৌন্দর্য মণ্ডিত স্থান। যেকাউকে মুগ্ধ করে সিলেটের অপরূপ সৌন্দর্য। তাইতো ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সিলেট বাংলাদেশের ভূস্বর্গ, অনেক বেশি জনপ্রিয় স্থান।


সিলেটের সবথেকে বেশি জনপ্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিছনাকান্দি, পান্তুমাই এবং রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। ব্যস্থতার দরুন অনেকে সময় নিয়ে আসতে পারেন না, ফলে একদিনে কম খরচে সিলেট ভ্রমণ কীভাবে করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চান। একদিনের ট্যুরে আজকে আমাদের এই ব্লগে জানাবো আপনি কিভাবে একদিনে সিলেটের এই তিনটি স্থান ভ্রমণ করবেন, তাও আবার একদম কম খরচে।


যেহেতু আপনি একদিনে সিলেট ভ্রমণ করবেন, কাজেই সেক্ষেত্রে আপনাকে যত সকালে সম্ভব বেড়িয়ে পড়তে হবে সিলেট থেকে। সেক্ষেত্রে ভোরের মধ্যে পৌঁছাতে হবে সিলেটে। সময়ের দিকে নজর রাখতে হবে যথেষ্ট। দিবানৈশ বাসগুলি সিলেটে সকালের মধ্যেই পৌঁছে যায়। তাছাড়া ঢাকা থেকে সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেস ভোর ৫টায় সিলেটে পৌঁছে। ব্যাক্তিগতভাবে এই ট্রেনটি আমার কাছে বেশ প্রিয়।


সিলেট ভ্রমণের উত্তম সময়

সিলেট ভ্রমণের উত্তম সময় হলো বর্ষাকাল। কারণ এ সময় সিলেটের রূপ সৌন্দর্য হয়ে ওঠে চিরসবুজ। যৌবন ফিরে পায় সিলেটের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলি। 

 

বিছনাকান্দি, পান্থুমাই এবং রাতারগুন সোয়াম্প ফরেস্ট এই তিনটি স্থান ভ্রমণের ক্ষেত্রে বর্ষাকার উত্তম। কারণ সেসময় এই তিনটি স্থান তার যৌবন ফিরে পায়, সতেজ হয়ে ওঠে। তখন নদীতে, ঝর্ণায় পানি থাকে অথই। কাজেই চেষ্ঠা করুণ বর্ষাকাল অথবা তার পরবর্তী সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এটা উত্তম সময় এই তিনটি স্থান ভ্রমণের ক্ষেত্রে। 

 

চলুন প্রথমে একদিনে ভ্রমণের এই তিনটি স্থান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক;

 

বিছনাকান্দি 

বিছনাকান্দি (bichnakandi) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত একটি পাথর কোয়ারী। এটি সিলেটের ভোলাগঞ্জ এবং জাফলং এর মতোই একটি পাথরকোয়ারি অঞ্চল। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো বিছনাকান্দিতে এসে মিশেছে। ফলে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুনে। দূরে মেঘালয়ের পাহাড়গুলির সৌন্দর্য যে-কাউকে মুগ্ধ করে তুলে। বিছনাকান্দির মূল আকর্ষন হলো এর উপর দিয়ে ছুটে চলা জলধারা। বিরামহীনভাবে ছন্দের তালে তালে ধ্বনি তুলে ছুটে চলেছে জলরাশি। মেঘালয়ে পাহাড়ের গায়ে ছুটে চলা শুভ্র মেঘের ভেলা। যে-কাউকে মাতাল করে তুলবে নৈসর্গিক সে দৃশ্য।

 

বড় বড় পাথরগুলির উপর দিয়ে পরিষ্কার জলরাশি ছুটে চলেছে, দূরের মেঘালয় পাহাড় কাছে ডাকছে যেনো, সে এক ভারি অপরূপ দৃশ্য। নৌকা ভ্রমণের সময় যতই দেখবেন এর চারদিকের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, ততই অবাক বনে যাবেন। কতই না সুন্দর এ পৃথিবী। বিছনাকান্দির যেনো আপনি প্রেমে পড়ে যাবেন। বারবার ছুটে আসতে ইচ্ছা করবে প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।


পান্তুমাই ঝর্ণা

পান্তুমাই ঝর্ণা (Panthumai Waterfall) হলো সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং অঞ্চলের একটি ঝর্ণা। পান্থুমাই পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে অবস্থিত একটি গ্রামের নাম। এটি বাংলাদেশের সুন্দর গ্রামগুলির মধ্যে অন্যতম একটি গ্রাম। এই গ্রামেই অবস্থিত পান্থুমাই ঝর্ণা। বিছনাকান্দি থেকে খুব সহজেই এই ঝর্ণা যাওয়া যায়। তবে এই ঝর্ণাটি ভারতের মধ্যে পড়েছে। পান্তুমাই ঝর্ণা ভারতের মধ্যে পড়লেও বাংলাদেশ থেকে খুব কাছ থেকেই উপভো করা যায় এই ঝর্ণা। 

 

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বিরামহীনভাবে কলকল ধ্বনি তুলে বয়ে চলেছে পান্থুমাই ঝর্ণার শুভ্র জলধারা। সে এক ভারি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। চারদিকে সবুজ পাহাড়। মন চাইবে পান্থুমাই ঝর্ণার একদম কাছে যেতে। কিন্তু তা কি করে হয়! সামনেই যে সীমান্ত। তবে আপনার মধ্যে তীব্র ইচ্ছা জাগবে, একদিন ঠিকই প্রবেশ করবেন মেঘালয় রাজ্যে। কিন্তু পান্থুমাই ঝর্ণার রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ করবার জন্য পা রাখতে হবেনা সীমানার ওপারে। বাংলাদেশ থেকেই উপভোগ করতে পারবেন পান্থুমাই ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য।


পান্থুমাই ঝর্ণা আপনাকে তার সৌন্দর্যের প্রেমে মাতাল করে তুলবে। একটুখানি পা ভিজিয়ে নিতে ভুলবেন না যেনো পান্থুমাই ঝর্ণার শুভ্র জলরাশিতে। চাইলে ভিজিয়ে নিতে পারেন সম্পূর্ণ শরীর।


রাতারগুল

রাতারগুল (Ratargul) জলাবন বা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট হলো সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি মিঠাপানির জলাবন। এই বনটি প্রায় ৩০৩২৫.৬১ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত, তবে এর মধ্যে ৫০৪ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে বন এবং বাকি সম্পূর্ণটাই জলাভূমি। তবে বর্ষায় সমগ্র এলাকাটি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন এই সমগ্র এলাকাটি দেখতে মনে হয় একইরকম। তাই তো রাতারগুল সিলেটের সুন্দরবন নামে খ্যাত। অনেক পর্যটকের কাছে রাতারগুল বাংলাদেশের অ্যামাজন। 


রাতারগুল জলাভূমি চার থেকে পাঁচ মাস তলিয়ে থাকে পানির নিচে। তখন মাথা উঠিয়ে থাকা অপরূপ এ বনের গাছগুলি ভারি সুন্দর লাগে। রাতারগুলের অথই পানি, চারদিকে বিশাল এক অরণ্য। ভারি অপরূপ দেখতে। তাইতো সারাদেশ থেকে হাজারো ভ্রমনপিপাসুরা আসে প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।


বর্ষার শেষের দিকে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উত্তম সময়। তখন চারদিকে অথই পানি। বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। গাছের ডালে দেখা মিলে অসংখ্য পাখি। চারদিক সবুজ হয়ে ওঠে সেসময়। 

 

শীতকালে রাতারগুল বনে দেখা মিলে হাজারো অতিথি পাখি। অসংখ্য পাখিদের ঝাঁক এসে নীড় বাধে রাতারগুলে। তখন অতিথি পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় বেশ। কে পাখি ভালো না বাসে! আমার মতে প্রত্যেকটা মানুষের অধিকাংশই পাখিপ্রেমী। পাখিদের কিচিরমিচির, কলকাকলী ভারি অপরূপ লাগে দেখতে। পাখি প্রেমীরা নৌকার মধ্যে বসে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইবে পাখিদের দিকে। কি সুন্দর! 


যেভাবে যাবেন

আপনি যেখান থেকেই আসুন না কেনো আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে সিলেটে। এবং একদিনে কম খরচে সিলেট ভ্রমণের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ভোরের মধ্যে সিলেটে পৌঁছাতে হবে।

 

ঢাকা থেকে বাসে সিলেট যাওয়ার উপায়

ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ বা মহাখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক বাস সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, শ্যামলী ও এনা পরিবহণ। এসব বাসের রয়েছে এসি এবং নন-এসি উভয় সার্ভিস। বাসে জনপ্রতি টিকেটের মূল্য পড়বে ৬০০ থেকে ৮০০। এসি বাসের ক্ষেত্রে ১৪০০ থেকে ১৫০০।। 

 

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়া উত্তম। ট্রেনে সিলেট যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভাড়াটাও কম লাগে। ঢাকা থেকে সিলেটে ট্রেনে যাওয়ার ক্ষেত্রে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর থেকে বেঁচে নিতে পারেন উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে। ভাড়া পড়বে শোভন চেয়ারের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৩২০টাকা এবং এসি চেয়ারের ক্ষেত্রে ৬৪০টাকা। সময় লাগে কোনোটাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা। টিকিট কেটে নিতে পারেন অনলাইন থেকে এবং অবশ্যই ট্রেন ছাড়া এবং পৌঁছানোর সময়টা দেখে নিবেন। কম খরচে ভ্রমণের ক্ষেত্রে শোভন চেয়ার টিকিট ক্রয় করুণ। 

আরও পড়ুন

অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটার নিয়ম

 

তবে যাতায়াতের জন্য উপবন ট্রেন উত্তম। ভোঁরে সিলেটে পৌঁছাতে চাইলে অবশ্যই উপবন এক্সপ্রেসে যাত্রা করতে হবে। উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনখানা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে ৮.৩০  এবং সিলেটে পৌঁছে ভোঁর ৫টায়। ট্রেনে বর্তমানে বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল চার্জ করার ও ব্যবস্থা রয়েছে। যেটি বেশ উপকারী।


সিলেট থেকে যেভাবে যাবেন তিনটি স্থান

 

রুট প্ল্যান

সিলেটের তিনটি স্থান তথা রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই একদিনে ভ্রমনের ক্ষেত্রে প্রথমে ভ্রমণ স্থান নির্বাচন করুণ বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই। কারণ সিলেট হতে রাতারগুলের থেকে বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই কিছুটা দূরে। কাজেই প্রথমে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই ঘুরে রাতারগুল থেকে সিলেটে ফিরতে পারেন। চাইলে প্রথমে রাতারগুলও যেতে পারেন, তবে ভালো হয় আগে বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই হয়ে রাতারগুল ঘুরে সিলেট শহরে ফেরা। এটা একদিনে সিলেট ভ্রমণের ক্ষেত্রে উত্তম রূট প্ল্যান।

 

গাড়ি ভাড়া

ভোঁরে সিলেটে ফিরে নাস্তা করে সিএনজি বা লেগুনা সারাদিনের জন্য রিজার্ভ ভাড়া করুণ। সিএনজিতে মোটে ৫ জন বসা যায় এবং লেগুনাতে ১০-১২ জন একসাথে যাওয়া যায়। সিএনজি সারাদিনের জন্য ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকা। লেগুনার ক্ষেত্রে সারাদিনের জন্য ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩০০০ টাকা।

 

সিএনজি বা লেগুনা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন এবং কোথায় কোথায় যাবেন সেটা বলে দিবেন ড্রাইভারকে। তাদের বলুন আপনি হাদারপাড় ও রাতারগুল যাবেন। ড্রাইভারের কন্টাক্ট নাম্বার নিতে ভুলবেন না।  


কিভাবে ঘুরবেন

সিলেট থেকে বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই

সিএনজি বা লেগুনা ভাড়া করে প্রথম গন্তব্য হাদারপাড়। সিলেট থেকে হাদারপাড় যেতে সময় লাগবে মোটে দুই ঘন্টা। হাদারপাড় বাজারে নেমে সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে রওয়ানা দিন বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। হাদারপাড় বাজার থেকে বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই ভ্রমণের ক্ষেত্রে নৌকা ভাড়া পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকা। ১০-১২ জন উঠতে পারবেন একটা নৌকায়। তবে আপনি যদি চান শুধু বিছনাকান্দি ঘুরবেন তবে সেক্ষেত্রে নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০। তবে অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন। কারণ পর্যটকের ভীড়ের সময় তাঁরা দাম বেশি চাইবে। কাজেই দামাদামি করতে ভুলবেন না। 


হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি যেতে সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। বিছনাকান্দিতে ৪০-৫০ মিনিটের বেশি সময় না দেয়ার চেষ্ঠা করুণ। কারণ যেহেতু আপনার হাতে স্বল্প সময়, ঘুরতে হবে একদিনে সিলেটের তিনটি স্থান। যদিও সেখানে সারাদিনই থাকতে ইচ্ছা করবে। 


বিছনাকান্দি ঘুরে রওয়ানা দিন পান্থুমাই ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। বিছনাকান্দি থেকে পান্থুমাই যেতে সময় লাগবে ঘন্টাখানেকের মতো। পান্থুমাই ঝর্ণা ভারতে হওয়ার দরুন এর একদম কাছে যেতে পারবেন না, দূর থেকে দেখতে হবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন - এটা যেহেতু সীমান্তবর্তী অঞ্চল কাজেই সচেতনতা অবলম্বন করুণ এখানে। কারণ বিএসএফ বাহিনী বাঙ্গালী বিজিবির মতো দয়ালু নয়।  


আপনি চাইলে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে পান্থুমাই ঝর্ণার কাছে গিয়ে দেখতে পারবেন, তবে এটা যেহেতু বর্ডার এলাকা কাজেই সাবধানে থাকুন।

 

পান্থুমাই ঘোরার ক্ষেত্রে ৩০-৪০ মিনিটের বেশি সময় দিবেন না। ঘোরা শেষে ফিরে আসুন হাদারপাড় বাজারে। 

 

দুপুরের খাবার

হাদারপাড় বাজারে মোটামুটি মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মুরগি দিয়ে ভাত খেতে পারবেন। আপনার চাহিদা অনুযায়ী খেয়ে নিন। আমাদের মতো স্বল্প বাজেটের পর্যটকদের ৫০-১০০ টাকায় হয়ে যায় দুপুরের খাবার। 

 

দুপুরের খাবার খেয়েই রওয়ানা দিন রাতারগুলের উদ্দেশ্যে।  

 

হাদারপাড় থেকে রাতারগুল

রাতারগুল ও পান্থুমাই ঘুরে দুপুরের খাবার খেয়ে রওয়ানা দিন রাতারগুলের উদ্দেশ্যে আপনার রিজার্ভ করা সিএনজি বা লেগুনাতে। অবশ্যই দুপুর দুইটার মধ্যে রওয়ানা দেয়ার চেষ্ঠা করবেন। সময় না মিললে ভ্রমণ প্ল্যান থেকে পান্থুমাই বাদ দিয়ে শুধু বিছনাকান্দি হয়ে রাতারগুল যেতে পারেন। সময় মেনে চললে অবশ্যই সময় মিলবে। 


হাদারপাড় থেকে রাতারগুল যেতে সময় লাগবে ঘন্টাখেনেকের মতো। রাতারগুলে রয়েছে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট, তবে সবথেকে জনপ্রিয় পয়েন্টটি হলো চৌড়াঙ্গী পয়েন্ট। এই পয়েন্ট থেকে রাতারগুল ভ্রমণে সবথেকে ভালো হয়। কাজেই রাতারগুলের চৌরাঙ্গী পয়েন্টে আসুন। 


চৌরাঙ্গী পয়েন্ট থেকে রাতারগুলে ঘন্টা দুই ঘোরার জন্য নৌকা ভাড়া নিন। ভাড়া পড়বে ৮০০টাকা। উঠতে পারবেন ৪-৫ জন। অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন। 


রাতারগুল ঘোরা শেষে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরুন সিলেট শহরে। এখানে রাতের খাবার খেয়ে রওয়ানা দিন বাসে বা ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ঢাকার ক্ষেত্রে ১১টার উপবন এক্সপ্রেসে উঠতে পারেন রাতের খাবার খেয়ে। তবে অবশ্যই আগাম ট্রেনের টিকেট ক্রয় করে নিবেন। এখানেই শেষ একদিনে কম খরচে সিলেট ভ্রমণ ট্যুর।


একা সিলেটের বিছনাকান্দি, পান্থুমাই এবং রাতারগুল ভ্রমণ

একা সিলেটের বিছনাকান্দি, পান্থুমাই এবং রাতারগুল ভ্রমণ সম্ভব। আপনি চাইলে একাই এই তিনটি স্থান একদিনে ভ্রমণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই চলে আসুন সিলেটে। সিলেট থেকে হাদারপাড় চলে যান লোকাল সিএনজি বা লেগুনা বা বাসে। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে লোকালে ১৫০টাকা। চাইলে কোনো গ্রুপের সাথে কথা বলে যুক্ত হয়ে শেয়ারে যেতে পারেন। অথবা কয়েকজন একা ভ্রমণকারী একসাথে হয়েও শেয়ারে যেতে পারেন।


হাদারপাড় বাজার থেকে সেখানে কোনো একটা গ্রুপের সাথে কথা বলে যুক্ত হয়ে বিছনাকান্দি এবং পান্থুমাই ভ্রমণের জন্য রওয়ানা দিন। সেক্ষেত্রে কোনো একটা গ্রুপে গিয়ে সেখানকার দলনেতা বা কোনো ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করুণ যে আপনিও তাদের সাথে তাদের নৌকায় ঘুরবেন বিছনাকান্দি। অবশ্যই তিনি আপনাকে নিবেন। অথবা একা ভ্রমণকারী কয়েকজনের সাথে যুক্ত হতে পারেন। আমি ব্যাক্তিগতভাবে নিজেই এমনটা করি। কারণ আমার একাই ঘুরতে হয়। বান্দরবান হোক আর যাইহোক, যেখানে রিজার্ভ যেতে হয়, সেখানে কোনো একটা গ্রুপের সাথে যুক্ত হোন। কারণ এতে যে গ্রুপে যুক্ত হবেন তাদেরও লাভ, তাদের কিছু টাকা বেঁচে যাবে নৌকা ভাড়ায়। অথবা লোকাল যে নৌকাগুলো একসাথে ৮-১০জন করে রওয়ানা দেয়, সেই নৌকাগুলোতে উঠতে পারেন। বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই এক্ষেত্রে ২০০টাকার মধ্যে হয়ে যাবে যদি ৮ জনের গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন।


বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই ঘুরে লোকাল সিএনজি বা লেগুনাতে করে অথবা কোনো গ্রুপে কথা বলে যে গ্রুপ রাতারগুল যাবে সেই গ্রুপে যুক্ত হয়ে রাতারগুলে রওয়ানা দিন। চৌরাঙ্গীতে নেমে ওই একই গ্রুপে নৌকায় উঠে ঘুরে দেখুন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। অথবা লোকালেও উঠতে পারেন। সেক্ষেত্রে রাতারগুলে ঘুরতে নৌকা ভাড়া পরবে ২০০-৩০০টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। যদি ৪-৫ জনের গ্রুপে নৌকায় উঠতে পারেন। রাতারগুলের নৌকাগুলোতে মোটে ৪-৫ জন ওঠা যায়। 


রাতারগুল ঘুরে সিলেটে ফিরুন সন্ধ্যার মধ্যেই। ভাড়া পড়বে লোকালে ১০০টাকা। সন্ধ্যার বেশি হলে লোকাল পরিবহণ পেতে সমস্যা হতে পারে। এমন সমস্যায় পড়লে রিজার্ভ করা কোনো গ্রুপের পরিবহনে করে ফিরুন সিলেটে। সময়ের দিকে রাখুন নজর। সিলেট থেকে রওয়ানা দিন বাড়ির উদ্দেশ্যে। এখানেই শেষ হয়ে যাবে আপনার একা একদিনে কম খরচে সিলেট ভ্রমণ।


একদিনে সিলেট ভ্রমণ খরচ

একদিনে সিলেটের তিনটি স্থান রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখানে যে ভ্রমণ খরচটা উল্লেখ করা হচ্ছে, এর থেকে কমও লাগতে পারে আবার বেশিও লাগতে পারে। এখানে শুধুমাত্র আপনাকে ভ্রমণ খরচ আইডিয়া দেয়া হচ্ছে। যদি এই প্রসেস এ সিলেটের এই তিনটা স্থান ভ্রমণ করেন তবে এর বেশি লাগার কথা নয়। তবে অনেক সময়, সময় ভেদে পরিবহণ খরচ কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে, তবে সেটি অতি-সামান্য। তো চলুন আমরা ভ্রমণ খরচটা দেখে নেই; 

  • ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যাওয়া আসা মিলে ভাড়া ২২০+২২০=৪৪০
  • সকালের নাস্তা জনপ্রতি ৫০টাকা 
  • সিলেট থেকে একদিনে তিন স্থানের চারজনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ ভাড়া ৩৫০টাকা
  • বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই নৌকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে ৪ জনের গ্রুপে জনপ্রতি ভাড়া ৪০০ টাকা 
  • দুপুরের খাবার ১০০টাকা
  • রাতারগুলে নৌকা ভ্রমণ জনপ্রতি ভাড়া ২০০টাকা
  • রাতের খাবার ১০০টাকা
  • অতিরিক্ত খরচ ১০০টাকা

 

৪ জনের গ্রুপে ঢাকা থেকে সিলেট মোট ভ্রমণ খরচ

৪ জনের গ্রুপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে মোটের উপর ১৭৪০টাকা। 

 

৮ জনের গ্রুপে ঢাকা থেকে সিলেট মোট ভ্রমণ খরচ

তবে আপনাদের গ্রুপে যদি ৮ জন সদস্য থাকে, সেক্ষেত্রে লোকাল লেগুনা ভাড়া সারাদিনের জন্য ১০০টাকা এবং, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই সারাদিনের জন্য নৌকা ভ্রমণ ২০০টাকা এবং রাতারগুলে ২০০ অর্থাৎ ঢাকা থেকে ৮ জনের গ্রুপে মোটে ১২৯০টাকা খরচ হবে।  

 

ঢাকা থেকে একা মোট সিলেট ভ্রমণ খরচ

ঢাকা থেকে বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ও রাতারগুল ভ্রমণের ক্ষেত্রে মোট খরচ ১৫০০ এর মধ্যে হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়া আসা মিলে ৪৪০। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার মিলে ২৫০। সিলেট থেকে হাদারপাড় ১৫০। বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই ভ্রমণ ৪০০টাকা। হাদারপাড় থেকে চৌরাঙ্গী ১০০টাকা। রাতারগুল থেকে সিলেট ভাড়া ১৫০টাকা। 


সতর্কতা

  1. ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যার মধ্যেই সিলেট শহরে ফিরে আসার চেষ্ঠা করুণ। 
  2. পান্থুমাই সীমান্তবর্তী জায়গা, কাজেই সাবধানে থাকুন। 
  3. যাতায়াতের সময় যানবহন ভাড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। 
  4. খাওয়ার ক্ষেত্রে সেখানকার স্থানীয় হোটেলে খেতে পারেন।
  5. বর্ষায় বিছনাকান্দিতে পানির স্রোত প্রচুর থাকে, কাজেই সাবধানে থাকুন। 
  6. পর্যটকের চাপ থাকে যে দিনগুলো ওই দিনগুলোতে না যাওয়াই ভালো। শুক্রবার ও শনিবার পর্যটকদের বেশ ভীড় থাকে। কাজেই এই দিনগুলো ব্যাতিত যাওয়ার চেষ্ঠা করুণ। 
  7. কম খরচে যেতে সিলেট যেতে হলে ট্রেনে করে শোভন চেয়ারে যেতে ভুলবেন না। এতে খরচ বেঁচে যাবে অনেক। 
  8. একদিনে সিলেটের তিন জায়গা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সময়ের দিকে নজর রাখুন। 
  9. একদিনে কম খরচে সিলেট ভ্রমণে একা গেলে কোনো গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে শেয়ার করে যান। 
  10. পরিবহণ ভাড়ার ক্ষেত্রে দামাদামি করুণ। এমনভাবে তাদের সাথে কথা বলুন যেনো তাঁরা মনে করে আপনি এসব জায়গা ও ভাড়ার ব্যাপারে বেশ দক্ষ। তাহলে বেশি দাম ধরবে না। যেমনটা আমি করি, এমনভাবে কথা বলি যেনো তাঁরা মনে করে এ জায়গা আমার অনেক দিনের চেনা। এখানকারই স্থানীয় বুঝি আমি কিংবা এই জায়গার শহরেই থাকি। দূর্বলতা বা অদক্ষতা প্রকাশ করা থেকে দূরে থাকুন।
  11. বিছনাকান্দি, রাতারগুল বা সিলেট শহরের পরিচ্ছন্ন পরিবেশে যেখানে সেখানে দয়া করে ময়লা ফেলবেন না, যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে পরিবেশ নষ্টকারি ব্যাক্তিরা পরিবেশের শত্রু। পরিবেশ তাদের পছন্দ করেন না। আর পরিবেশ যাদের পছন্দ করেন না, তাদের মহান সৃষ্টিকর্তাও পছন্দ করেন না। 

 

আরও পড়ুন 

কম খরচে একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ ট্যুর প্ল্যান

কম খরচে একদিনে সীতাকুণ্ড ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণ বিস্তারিত

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ বিস্তারিত

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ভ্রমণ বিস্তারিত

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!