pagead2.googlesyndication.com শ্রীমঙ্গলের পথে পথেঃ কালীঘাট

শ্রীমঙ্গলের পথে পথেঃ কালীঘাট

Nir
0
হাসনাবাদ, শ্রীমঙ্গল


ঈদের তৃতীয় দিন। আমি আর মেঝো ভাই। এসেছি কালীঘাটের পথে। সেই শ্রীমঙ্গলের নলুয়ারপাড় গ্রাম থেকে। সেখানে আবার আসা সুদূর রংপুর থেকে। এবার ঈদ অবশ্যি এখানেই করা।

ইচ্ছা ছিলো একা আসার। কিন্তু বড় ভাইয়ের কথামতো আর মেঝো ভাইয়ের আগ্রহে তাকে নিয়ে আসা। তবে শর্ত দিয়েছিলুম হাটতে হবে সারাদিন ছোটখাটো পাহাড়ি পথে। রাজি হওয়ায় নিয়ে আসা। গন্তব্যস্থান অফিং হিল। অফিং হিল মানে যেখানে প্রকৃতির ভিন্ন রূপ। ভারি অপরূপ।

শ্রীমঙ্গল বদ্ধভূমি একাত্তর আমার মেঝো ভাই দেখেনি। আমি অবশ্যি আগেই দেখেছি সেবার আসার সময়। তাছাড়া আমার মেঝো ভাই এবারেই প্রথম শ্রীমঙ্গল এসেছে। কাজেই দেখা না থাকারই তো কথা। যেহেতু এর ইতিহাস অনেক, তাই তাকেও দেখালাম। আহা কত নিরিহ মানুষকে যে এখানে একত্রিত করে হায়েনার দলেরা গুলি করে মেরেছে। যারা শ্রমিক, কাজ করে খায় চা বাগানে। সে ইতিহাস অনেকেরই জানা।

নীলকন্ঠ কালীঘাট রোডে সিএনজি ধরে সোজা কালুরঘাট। চাইলে নীলকন্ঠ চা কেবিনে বসে চা পান করা যায়। এক থেকে এগারো কালার পর্যন্ত চা রয়েছে এখানে। প্রতি কালারের জন্য দশ টাকা। সারা দেশেই এই চা কেবিন তুমুলভাবে জনপ্রিয়। বইয়ের পাতায় পাতায় পর্যন্ত এর নাম। কালীঘাট পনেরো মিনিটের পথ। রাস্তার দু'ধারে সাড়ি সাড়ি চা-বাগান। চায়ের দেশে তো চা বাগান থাকবেই। অপরূপ চায়ের বাহাড়ি রূপ। সামনে পাহাড়ি ঢালে চা-বাগানগুলো যা রূপ ধারণ করেছে! এদিকটায় উচু পাহাড় খুবই কম, সবই ছোট ছোট। যেখানে যাচ্ছি সেখানে রয়েছে উঁচু উঁচু অনেক পাহাড়। কিন্তু মেঘালয়ের মতো নয়। ভাড়াটাও বলি, নীলকন্ঠ চা কেবিন থেকে কালীঘাট যেতে সিএনজি কিংবা অটোভাড়া বিশ টাকার বেশি নয়।

কালিঘাট থেকে খাসিয়াপুঞ্জি যাওয়ার রাস্তা


কালীঘাট থেকে যেতে হবে সোজা অফিং হিল। এজন্য সিএনজি যেখানটায় নামিয়ে দিলো তার ডানের ইট বিছানো রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করলাম। অটোতেও যাওয়া যায়। কিন্তু এতো সুন্দর রূপকথার জগতে অটোতে গিয়ে কি লাভ! হাটা পথে অপরূপা গ্রামগুলো দেখতে দেখতে যাওয়ার আনন্দই আলাদা।

প্রথমে এলাম হাসনাবাদ। একটু দূরেই খাসিয়াপুঞ্জি। আগে খাসিয়াপুঞ্জি যাওয়ার ইচ্ছা বিন্দুমাত্র নেই। জঙ্গলবাড়ি চা বাগান (জায়গাটার বাম) এর সামনের বামে একটা রাস্তা। রাস্তার দু'ধারে পাহাড়ি চা বাগান। যা সুন্দর! বলে বোঝাতে পাড়বো না। সেলফি পাগল'রা কম করে হলেও হাজার খানেক ফটো তো তুলবেই। আচ্ছা চা বাগান কি পরীদের বাগান! পরী'দের চক্ষের পাতা থেকে কি চা পাতা হয়েছে। যা সুন্দর তাতে না হওয়াটাও অসম্ভব কিছু না। যাকগে, সেই পথে হাটতে লাগলাম মেঝোভাইকে নিয়ে। সামনে আর চা বাগান নেই। বিশাল অরণ্য। তার আগে কিছু আদিবাসি পুরুষ-মহিলা গাছ থেকে কি যেনো কাটছে। সেখানে রাবার বাগান। কিন্তু লোকগুলোকে দেখে যা ভয় পেয়েছিলাম। হাতে ইয়া বড় দা। যদি গলায় কোপ দেয় তো এক কোপে গলা দ্বিখন্ড হয়ে যাবে।
আমার মেঝোভাই, সে তো ভয়ে উল্টো বলতে শুরু করে দিয়েছিলো।
-
ওই লোকগুলো কি ভয়ংকর। এখান থেকে তারাতারি চল। ওদের মতিগতি ভালো না।
আমি বললাম;
-
ওরা এখানকার মানুষ, জঙ্গল ছাপ করতেছে, কাজেই কোনো ভয় নেই। চল তারাতারি সামনে।

সামনে একটু যেতেই প্রকাণ্ড জঙ্গল। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ যে কোথায় তা আমার জানা নেই। কালেংগা, লাউয়াছড়া, সোজা আসামের মেঘালয়ে চলে গিয়েছে। ওই পথেই ত্রিপুরা।
অরণ্যের মধ্যে ঢোকার একটিমাত্র পথ। বৃষ্টির পানিতে খাল হয় আছে। আর অন্যথায় গাছ মারিয়ে যেতে হয়। অনেক বিপদ। এখানে আমার আসার একমাত্র লক্ষ হলো এই অরণ্যের মধ্যে রয়েছে একটি লেক। লেক'টা অনেকের অপরিচিত। বনের মাঝে হওয়ায়। অনেক সুন্দর দেখতে। শাপলা, পদ্ম, পানকৌড়ি সবই রয়েছে সেখানে। সেখানেই যাওয়া মূল লক্ষ। কিন্তু সামনের জঙ্গলের মাঝের যে শরু পথ'টা, সে পথে প্রবেশ করতেই আলো আঁধারের রূপ নিলো। চারিদিকে কিচিরমিচির শব্দ। পাখপাখালির আওয়াজ। বানরের ছোটাছুটি। এ অরণ্যে, বানরের বাস প্রচুর। শুধু বানরই নয়, হনুমান ও। লাল বর্ণের হনুমান, কালো বর্ণের বানর। এরা যে কি খায় জানিনে। তবে একবার রাবার বাগানে উঠতেই দেখেছিলুম ঝাকে ঝাকে হনুমান রাবার গাছের ফল খাচ্ছে আর ঢিল মারছে আমাদের দিকে। বানরের আবার প্রিয় খাদ্য কলা। কলা পেলে তারা যাহা খুশি! ইচ্ছা আছে এই অরণ্যে একটিবার হলেও এক রাত কাটাবো।
সামনে যাচ্ছি তো যাচ্ছি কিন্তু যা খুজছি তা পাচ্ছিনে। জঙ্গল আরো গহিন হয়ে আসছে, পেছনের শরু পথটা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে মেঝো ভাই ক্রমাগত বলছে তো বলছেই;
-
বাঘ আসুক, খেয়ে ফেলুক। তোক রেখে পালাবো। কেউ আসি গুলি করুক। (রংপুরিয়া ভাষা একসাথে করে)
এই অরণ্যের মাঝ দিয়ে আবার চলে গেছে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত। ওদিকে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি। যা জানতে পারি জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে। আমি কোনো উত্তর না দিয়ে সামনেই যাচ্ছি। কিন্তু আর সহ্য করতে না পেরে শেষে বললাম;
-
এই বনে কোনো বাঘ নাই, পাগল বনে গেলে বাঘ আসে।
তারপর আর সামনে না গিয়ে বেড়িয়ে এলাম অরণ্য থেকে। সামনের পিচঢালা রাস্তা, ঠিক পিচঢালা নয়, ইট বিছানো, রাস্তার এক ধারে অরণ্য, অপর ধারে চা বাগান। পাহাড়ের ঢালে চা-বাগানগুলো। এ পথ দিয়ে একটু এগুতেই চোখে পড়লো খাসিয়াপুঞ্জি। পাহাড়ের উপরে বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে তাদের গ্রাম। তারা পান চাষ করে খুব। হয়তো চা'ও। কারণ নিচে চা বাগান, সোজায় সেই অরণ্য। পাশে পানের গাছ।
পাহাড়ে সিড়ি করেছে, সেখানে উঠে বেশ খানিকক্ষণ তাদের গ্রামখানা ঘোড়া হলো। বাড়িগুলো অনেক সুন্দর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আঙ্গিনায় বসে অনেকেই পান সাজাচ্ছে। আমি অবশ্যি পান খাইনে। সেখানে এক বাড়িতে কিছুক্ষণ থাকাও হলো, আমার পরিবারে বাবা আর মেঝো ভাই পান খান। মেঝো ভাই খেয়ে নিলো কয়েকটা পান তাদের থেকে চেয়ে নিয়ে। খেতে নাকি অনেক স্বাদ!

আর বেশিক্ষণ থাকলাম না। কারণ যেতে হবে অফিং হিল। এখনো বেশ কিছু রাস্তা পড়ে আছে। কিন্তু রাস্তায় এসে ভাই আর হাটতে পারে না। ঘ্যানঘ্যানানি শুরু হয়ে গেছে ওর। পায়ে নাকি ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। তাই আর যাওয়া হলো না। একটা সিএনজিতে উঠে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। সেখান থেকে সিন্দুরখান অথবা সাতগাঁও। তারপর নলুয়ারপাড়। কিন্তু সিএনজি হাসনাবাদ বাগানবাড়ি বাজারে নামিয়ে দিলো, অন্য অটোতে দিলো তুলে, এক টাকাও তিনি নিলেন না। বিশ টাকা বেঁচে গেলো। সিএনজি চালকের সাথে গল্প করাটা হলো বেশ।
এদিকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রীতিমতো মুষুলধারে বৃষ্টি। ঝাকে বলে ঝুম-বৃষ্টি। শ্রীমঙ্গল বৃষ্টির অঞ্চল। এখানে হুটহাট করে বৃষ্টি আসে। পাহাড়ে ঘেড়া, অরণ্যে ঢাকা এবং প্রচুর বনজঙ্গল হওয়ার দরুন এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর।
অবশ্যি শ্রীমঙ্গলের অনেক নাম, পর্যটনের দেশ, চায়ের রাজধানী, বৃষ্টিপাতের দেশ কত্তকি!
এছাড়াও আরও পড়তে পারেন;

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!