প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল - ঝংকার মাহবুব

Nir
0
বইয়ের নামঃ                 প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল
লেখকঃ                         ঝংকার মাহমুদ
বইটির মূদ্রিত মূল্যঃ      ২৪০
ছাড়কৃত মূল্যঃ              ২০৪
প্রকাশনীঃ                     আদর্শ পাবলিকেশনস
পৃষ্ঠাঃ                             ১২৪
ধরণঃ                             পড়ালেখা, মোটিভেশন

ছবিঃ মার্চ ২০১৯


প্রত্যেক ছাত্ররই তার ছাত্র জীবনে নানান সব প্যারা, হতাশার আবিষ্কার ঘটে, প্যারায় জর্জরিত হয়ে যায় পুরো ছাত্র জীবন। এমন সব নানান পরিস্থি্তির শিকার হতে হয় অনেক ছাত্রকেই। আমরা মানুষ, আমাদের হতাশা আসবে এটাই স্বাভাবিক। ঠিক সেই মূহুর্তে আমাদের এমন কাউকে দরকার হয়ে পরে যে খুব সুন্দর ভাবে আমাদের পরামর্শ দিতে পারবে যে কিভাবে চলতে হবে, কোনটা করলে ভালো হবে এবং কোনটা করলে মন্দ হবে, ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য কি করতে হবে ইত্যাদি নানান সব পরাপর্শ। এই বইটিতে নুয়াজ সে কিনা সর্বদাই তার পড়ালেখায় লুজার টাইপের। কিন্তু তার কলেজের সোহান তাকে এই কারণে প্রায় লুজার বলেই ডাকেন যার কারণে নুয়াজের একটু খারাপ লাগে, এটাই স্বাভাবিক কারণ তার একটা ভালো নাম আছে। কিন্তু নুয়াজ পরবর্তী'তে সেই বড় ভাই সোহান এর কাছ থেকে পড়ালেখা বিষয়ে পরামর্শ নেন, সকল কথা নুয়াজ তার কলেজের বড় ভাই সোহান কে খুলে বলেন, এবং সে খুব সুন্দর ভাবে তাকে পরামর্শ দেন।

আমার মতে প্রতিটি ছাত্রের এই বইটি পড়া উচিৎ।

আমার দারায় কোনো কিছু সম্ভব নয়, আমি পাড়ি না, পারবো না, হবে না যাদের মাথায় এসব ঘুরপাক খায় পরিক্ষার প্যারা, পড়া মনে থাকে না, গার্লফ্রেন্ড ছ্যাকা দিয়ে বাকা বানাইছে নানান সব প্যারার মদ্ধ্যে জর্জরিত হলে আপনার জন্য প্রয়োজন ৫০০+ পাওয়ারের প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল।

বইটি কাদের জন্য
আমার দারায় কোনো কিছু করা সম্ভব নয়, আমি পাড়ি না, পারবো না, হবে না যাদের মাথায় এসব ঘুরপাক খায়, পরিক্ষার প্যারা, পড়া মুখস্থ হয় না, গার্লফ্রেন্ড ছ্যাকা দিয়ে বাকা বানাইছে ইত্যাদি নানান সব প্যারায় জর্জরিত হলে আপনার জন্যই প্রয়োজন হাই ভোল্টের প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল।

এই বইটির উদ্দেশ্য
এই বইটির উদ্দেশ্য হলো তোমাকে তোমার লাইফের জন্য অর্জনের জন্য এবং সপ্ন জয়ের জন্য গাইডলাইন দেয়া। আমাদের তরুন প্রজন্মের একটি বড় অংশ জীবনের একটা পর্যায় এসে হতাশ হয়ে পড়ে। কী করা উচিৎ, কিভাবে করা উচিৎ সেটা নিয়ে তারা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে।
যারা তাদের সকল প্যারাগুলো থেকে মুক্তি পেতে চায়, টেনশন মুক্ত হতে চায়, ডাস্টবিনে ফেলে দিতে নিজের সব প্যারাগুলো কিন্তু পাচ্ছে না কোনো ক্রমেই। একদম অসম্ভব হয়ে যাওয়া অবস্থা। তাদের জন্য প্রয়োজন প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল।

বইটি যেভাবে পড়বেন
বইটা পড়ার সময় ভুলেও দ্রুত পড়ে শেষ করার চেষ্টা করবেন না। বইটা পড়া শেষ হলেই বাঁচি এমন মনোভাব নিয়ে বইটা পড়া শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে পড়ুন, ব্যবহার করুন হাইলাইটার পেন অথবা যে কোন কলম এবং দেগে রাখুন গুরুত্বপূর্ণ মেইন মেইন পয়েন্ট গুলো। গান শুনতে শুনতে বইটা পড়বেন না, নইলে কিছুই বুঝবেন না। আম ও যাবে ছালাও যাবে
বইটাতে রয়েছে অসংখ্য ক্লিনিক, অবস্যই ক্লিনিকে আপনি চেক আপ করে নিবেন নিজেকে। হাতে থাকতে হবে একটা কালো পেন। যা যা ভরট করবেন তা সঠিক হতে হবে, নিজেকে ফাকি দিবেন না, এবং তা শুধরে নিবেন, পড়ে সেটা ক্লিনিকে জানিয়ে দিবেন।



না থাকলে ফোকাস, কপাল হবে ফাটা বাশ
টিভিতে খেলা চলছে। হলে টিভি রুমে উপচে পড়া ভিড়। নুয়াজ ভাবল সে নিজের হলে খেলা না দেখে সোহাগ ভাইয়ের হলে যাবে। তাইলে খেলা দেখতে দেখতে সোহান ভাইয়ের সঙ্গে কিছু জিনিস ডিসকাস করা যাবে।

সোহান ভাইয়ের হলে গিয়ে দেখে সেখানেও টিভি রুম ভর্তি। পেছনে দাঁড়িয়ে সোহান ভাই খেলা দেখছে। তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো নুয়াজ। তাকে দেখেই সোহান ভাই বলে উঠলো---
আজ তো বাংলাদেশ টিমের লুজ অবস্থা। তাই তোকে আর লুজ বলব না। তো, মিস্টার-মিনিস্টার নুয়াজ। খবর কি তোর?
---- খবর মোটামুটি, আটার রুটি। আপনার কথা মত একটা টার্গেট সেট করছি। কয়েকবার লাইফ স্ক্যানও করছি। পড়ালেখায় আরও বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ফোকাস ধরে রাখতে পারতেছি না।
ও আচ্ছা, এই কথা।

এই যে আমরা ক্রিকেট খেলা দেখতেছি। বোলার বল করতেছে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যান সজোরে ব্যাট চালিয়ে ছক্কা হাকিয়ে ফেলল। এই বলিং আরব্যাটিং চলার মাঝখানে যে আম্পায়ার তার নাক চুলকাইল। ক্রিজের পেছনে উইকেট কিপার যে দুই পা সামনে এসে দাঁড়াল, সেটা তোর নজরে পড়বে না। কারণ তোর ফোকাস ছিল বল আর ব্যাটসম্যানের দিকে।
আমরা যখন কোন কিছুর দিকে গভীর ভাবে মনোযোগ দেই, তখন চারপাশের অনেক ছোটখাটো, মাঝারি জিনিসগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। নজরে আসে না। এই গভীর মনোযোগ দেওয়ার বলে, Deep Focus।

এইবার চিন্তা কর তুই মাঠে বসে খেলা দেখতেছস। চাইলে তোর সামনে থাকবে বিশাল মাঠ। তুই চাইলে বাউন্ডারির কাছে যে ফিল্ডার আছে তাকে দেখতে পাবি। মিনি মিনি সাইজের বোলার আর ব্যাটসম্যানকে দেখতে পাবি। মাঝেমধ্যে মোবাইলে সেলফি তুলতে গিয়ে একজনের আউট হয়ে যাওয়া মিস করবি। তার মানে এখন তোর ফোকাসটা টিভির সামনে বসে খেলা দেখার মতো ফোকাসড না।

আমরা যখন কোন কিছু চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করি। যেমন উমুককে কিভাবে প্রপোজ করা যায় কিংবা এইখান থেকে মতিঝিল কিভাবে যাওয়া যায়। এই টাইপের চিন্তা করতে গেলে এই দিক-ওই দিকের জিনিস মনে আসে। এরকম বিক্ষিপ্ত চিন্তা ভাবনা করার সময় ফোকাস একটু কম থাকে। তাই এই ফোকাস কে বলে বিক্ষিপ্ত চিন্তা বা Diffused Focus।

 
বেশির ভাগ পোলাপানের পড়তে বসার সময় থাকা উচিত ডিপ ফোকাস। কিন্তু তারা Deep Focus নিয়ে পড়তে বসার চেষ্টা করে না। সে জন্যই দুই লাইন পড়তে না পড়তেই মনে আসে----কবে যে সকিনার সাথে, চন্দ্রিমা রাতে, হাত ধরে হাতে, সমুদ্র সৈকতে হাঁটব। এ রকম হাবিজাবি জিনিস মাথায় আসতে দিয়ে দেখে, দুই ঘণ্টায় দুই লাইনের বেশি পড়া হয়নি।

শুন, আমাদের ব্রেইন হচ্ছে বান্দরের মত। এইটাকে যত বেশি লাই দিবি, এইটা তত বেশি এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফাইতে থাকবে। আর যদি স্ট্রিক্ট হয়ে শক্ত কমান্ড দেস। তাইলে ব্রেইন সুবোধ বালকের মতো তোর কথা শুনতে শুরু করবে। তাই আজকের পর থেকে যখন পড়তে বসবি, তখনই নিজেকে বলে দিবি, আমি দুই মিনিট পরি আর দুই ঘণ্টা পড়ি। যতক্ষণ পড়ব, ১০০ ভাগ কনসেন্ট্রেশন দিয়ে পড়ব। এইটুকু থেকে শুরু করে এইটুকু পর্যন্ত শেষ করবো। এর মধ্যে কোন কিন্তু নাই। কোন ছাড় নাই।

When you're hunting elephants, don't get distracted chasing rabbits.
----T. Boone Pickens

বইটি সম্পর্কে আমার কিছু কথা
প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল এমন একটি বই যা কিনা আপনার ঘুমন্ত অসুস্থ মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ঠ্য সহায়তা করবে। আপনার প্যারাময় ছাত্রজীবনের সকল প্যারাগুলো নিরাময় করে দিবে। রিসেট করে দিবে সকল ছোট, বড় প্যারাগুলো। আপনি লুজার হয়ে থাকলে তা কনভার্ট করে উইনার বানায় দিবে।

লেখক তার বুদ্ধিদীপ্ত মাথা দিয়ে বইখানা লিখেছেন খুবই সাবলম্বি ভাষায়। অ্যাটেনশন বাড়ানোর জন্য ছন্দ টাইটেল। (পুরো বইয়ে লেখক যেনো তার কথা ছোট ভাই বা বোনকে বলছেন। বইয়ে পাঠকের প্রতি সম্বোধনটাই বেশ চমকপ্রদ - একেবারে কথ্য ভাষা _ চকক হাসান)
বইটিতে রয়েছে দারুন সব টুলস, যেগুলো নিজেকে যাচাই করার জন্য সহায়ক)
প্রতিটি পাঠকেরই এই বইটি পড়া উচিৎ। বিশেষ করে ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক। ঝংকার মাহবুব ভাই সত্যি অসাধারণ একজন লেখক। আমার সব থেকে প্রিয় লেখক।

এক নজরে বইটির সূচিপত্র
ভুল করে কেউ এভারেস্ট জয় করে না
সময় ট্রেনে ফেললে, টার্গেট এচিভ হয়না
লাইভ করলে অডিট, বাড়বে ক্রেডিট
পুচকা টার্গেট দিবে, প্রেস্টিজিয়াস গিফট........ ১১,১৩,১৫,১৮

না থাকলে ফোকাস, কপাল হবে ফাটা বাশ
অ্যাটেনশন হলে ফাস, রেজাল্ট হবে জিন্দা লাশ
অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল, লাইফ ধ্বংস করার হস্তী
ক্যালকুলেটেড মাস্তি, ফিউচারের স্বস্তি.......... ২১,২৩,২৬,২৯

মাইক্রোশিফট করলে, লাইফ হয় না গুবলেট
পড়া নিয়ে খেলা করে, নাকের ডগার হেলমেট
ইফেক্টিভ লাইফস্টাইলকে, মন্ত্রী বলে যক্ষা
মাস দাও মা ভিক্ষা, তিন মাস পর পরীক্ষা...... ৩৩,৩৫,৩৭,৪০

অপরিচিতদের সঙ্গে কথা না বলার ধানাই-পানাই
ইন্ট্রোভার্ট হয়েই, চায়েই কোপ মারে, রাম কানাই
আম আচার প্যাশন ছাড়া ফিউচার
লিডার হলেই পয়দা হবে চিকন পিনের চার্জার..... ৪৮,৫১,৫৩,৫৭

ভয়ের সঙ্গে পাঙ্গা, ফিউচার হবে চাঙ্গা
প্রেমে স্বৈরাচারী করে, পালিয়ে বাচে লাফাঙ্গা
জেদ করে, খারাপ সময় ভেদ করার ফুডানি
কমপ্লিট গাইডলাইন গিলে, দেখাও তোমার মাস্তানী..... ৬১,৬৪,৬৭,৭১

মাইক্রো লেভেলে হেরে মোরা, মেগা লেভেলে বুঝি
পড়ে মনে না থাকলেও, ক্রাশের চিজটারে খুজি
বেশি নম্বরের সিক্রেট ঠেকায়, ডান্ডি খাওয়ার ভোজ
ইংরেজি শেখার মাইক্রোডোজে, অস্থির পোজ......৭৮,৮০,৮৫,৮৭

না হয়ে দিকভ্রান্ত, ৩ সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত
কোথাও চান্স পায়নি, হাতে হারিকেন ছাড়িনি
চাকরির মায়েরে বাপ, স্টুডেন্ট লাইফে স্টার্টআপ
টাইম ম্যানেজমেন্টের সার্জারিতে, লাগবে না চেকআপ...... ৯৩,৯৭,৯৯,১০২

অল্প অল্প ডিপোজিট, মাস শেষে ভালো হ্যাবিট
প্রোকাস্টিনেশনকে ফ্রাই করে, ডেস্টিনেশনের সার্কিট
হায়ার স্টাডির ভিটামিন, পার্ট নেওয়ার প্রোটিন
ফিউজ লাইফে ভোল্টেজ লাগায়, মিস্টার মুড়ির টিন..... ১০৭,১১০,১১২,১১৬


সামর্থ্য থাকলে অনুগ্রহ করে বইটি রকমারি থেকে কিনে পড়ুন। বই হাতে নিয়ে পড়া আর পিডিএফ পড়া এক না। বই হাতে নিয়ে পড়ার ফিলিংস -ই আলাদা।

প্যারাময় লাইফের প্যারাসিটামল

 
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৫/৫

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!