কবি - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

Nir
0

বইয়ের বিবরণ

  • বইয়ের নামঃ কবি
  • লেখকঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
  • ভাষাঃ বাংলা
  • পাতা সংখ্যাঃ ১৫২ টি
  • বইয়ের ধরণঃ উপন্যাস
 

ভূমিকা

কবি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত শ্রেষ্ঠ এবং কালজয়ী একটি উপন্যাস। নিতাইচরন নামের চোর ডাকাত ডোম বংশের ছেলের কবিয়াল থেকে কবিতে রূপান্তিত হওয়ার কথাই কবি উপন্যাসের মূখ্য কথা।
 

কাহিনী সংক্ষেপ (স্পয়লার এলার্ট) 

চোর ডাকাত ডোম বংশের ছেলে নিতাইচরণ হঠাতকরে হয়ে গেলো কবি। এ যেনো এক বিষ্ময়করই নয়, রীতিমতো সংঘটন। 
মহাপীঠ অট্রোহাস গ্রামে মাঘী পূর্ণিমার দিনে চামুণ্ডার পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর মেলা বসে এবং আয়োজন হয় কবিগানের পালা। এ বছরেও তাই। নির্দিষ্ট সময়ে কবিয়াল মহাদেব তার দলবল নিয়ে উপস্থিত হলেও বিপক্ষ কবিয়াল নোটনদাস উপস্থিত ছিলেন না। জানা যায় গতবছরের পাওনা বাকি থাকায় তিনি অনত্র পালিয়েছেন বায়না পেয়ে।
 
এরই সুযোগ নিয়ে আসরে উপস্থিত হয় নিতাই। সকলেই তাকে সাদরে গ্রহণ করে – তার আগমনে মহাদেব পর্যন্ত খুশি হয়। শুরু হয় কবিগানের লড়াই। একপর্যায় নিতাই দোয়ারকি ছেড়ে নিজেই ছন্দবদ্ধ হয়ে জবাব দিতে শুরু করে। এতে বিস্ময় বোধ করে সকলেই। জমিদার বাবুরাও বিস্মিত হয়। মহাদেব কবিয়াল অশ্লীল গালিগালাজ ও বাক্যবাণে নিতাইকে বিদ্ধ করলে নিতাই পরাজিত হয়। এরই মধ্যে নিতাই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠে কবিয়াল পরিচয়ে। এভাবেই নিচু সমাজের নিতাইর উত্তরণ ঘটে কবিয়ালে।
রাজনের শ্যালিকা ঠাকুরঝি। নিতাইয়ের মেয়েটাকে বড় ভালো লাগতো। ঠাকুরঝি দেখতে কালো দীর্ঘাঙ্গী মেয়ে। পেতলের ঘটি মাথায় নিয়ে রেলপথের ধার দিয়ে গ্রামে আসে। এ গ্রামের দুধের সর্বাহ করে ঠাকুরঝি। 
 
একদিন রাজন ঠাকুরঝি’কে আলকাতরা বলে ভতসনা করলে ঠাকুরঝি এতে মন খারাপ করে চলে যায়। যার দরুণ রাজনের ও মন খারাপ হয়ে যায়। সে গান বাঁধে – কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ কেনে। ঠাকুরঝিকে গানখানা শুনালে সে বেজায় খুশি হয়। অন্য একদিন ঠাকুরঝি’র খোঁপায় কৃষ্মচূড়া ফুল দেখে সে পড়ের লাইন বাঁধে – কালো কেশে রাঙ্গা কুসুম হেরেছ কি নয়নে? এভাবেই ঠাকুরঝিকে উপলক্ষ করেই কবিয়াল নিতাইচরণ ক্রমশ কবি হয়ে উঠে।
উপন্যাসের একপর্যায়ে তাঁদের গ্রামে ঝুমুরদল আসে। সেই ঝুমুরদলে সকলের অনুগ্রহের দরুণ নিতাইচরণ ও গান গায় একখানা। তার গান শুনে বসন্ত মন খারাপ করে আসর পরিত্যাগ করে যায় নিতাইয়ের ঘরে। নিতাই ঘরে গিয়ে দেখে বসন্ত শুয়ে আছে। প্রচুর মদ খাওয়ার দরুণ তার জ্বর। বসন্ত নিতাইকে মাথা টিপে দিতে বললে সে মাথা টিপে দেয়। কিন্তু জানালার ওপার থেকে ঠাকুরঝি তা দেখে ফেললে সে চলে যায়। দীর্ঘ কয়েকদিন আর ঠাকুরঝির সাথে নিতাইয়ের দেখা হয় না। সে অপেক্ষায় থাকে সেই কৃষ্মচূড়া গাছের নিচে। কিন্তু ঠাকুরঝি আসেনা।
 
পরে রাজনের থেকে জানতে পারে ঠাকুরঝি মূর্চা (অজ্ঞান) রোগে আক্রান্ত। ঠাকুরঝি যে তার মনের মানুষ এ কথা জানিয়ে দেয় রাজনকে। ঠাকুরঝি’কে কালীরথানে আনা হলে রোগের লক্ষণ জানবার জন্য। সেখানে তাকে শারীরিক বির্যাতনে ঠাকুরঝি সব কথা বলে দেয়, নিতাই, গান, কৃষ্মচূড়া সব।
নিতাই জানতে পেরে লজ্জায় শঙ্কায় পড়ে যায়। পরে কৃষ্মচূড়া গাছের নিচে বসে ভাবে এ থেকে পরিত্রাণের। কোন পথে গেলে শান্তি পাবে সে? পরে নিতাই ঝুমুরদলের সাথে অনত্র চলে যায় তাঁদের অনুগ্রহে। ট্রেনে সমস্ত পথটাই ভাবে নিতাই ঠাকুরঝি’কে নিয়ে। রাজন বন্ধু বিচ্ছেদের বেদনায় আপ্লুত হয়ে অঙ্গিকার করে; ঠাকুরঝির বিয়ে ভেঙ্গে তার সাথে বিয়ে দিবে। কিন্তু নিতাই কবি হয়ে কিভাবে মানুষের সুখের ঘর ভেঙ্গে দেয়? সে গান বাঁধে –
“চাঁদ তুমি আকাশে থাক আমি তোমায় দেখব খালি”
ঝুমুরদলের মতো বেশ্যা পল্লিতে প্রবেশ করে নিতাই। এখানে নিতাই অসঙ্গগত জীবনে জড়িয়ে পড়ে ক্রমেই। মাঝে মাঝে ঠাকুরঝি’র সৃতি জাগ্রত হয় তার মনে। নিতাই ঝুমুরদলে গান গায়। এক পর্যায়ে বসন্তের সাথে তার ভালোবাসা হয়। কিন্তু বসন্তের মধ্যে পুরানা রোগ আবারও জাগ্রত হয়। সেই সময় বসন্তের খুব ইচ্ছা করে সংসারে আবদ্ধ হওয়ার। এই দল থেকে মুক্তি পাওয়ার। নিতাই গান বাঁধে –
“এই খেদ মোর মনে মনে।
ভালোবেসে মিটল না আঁশ_ কুলাল না এ জীবনে।
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”
গানটি বসন্ত শুনেই দু’চোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে তার। সে নিতাইকে বলে; এ গান কেনে গেলে? ব্যাকুল হয়ে উঠে বসন্তর প্রেমসুখ-প্রত্যাশী নারী হৃদয়। কিন্তু বসন্ত আর বেঁচে থাকলো না বেশিদিন। যৌন ও কাশরোগে ভোগে। রোগক্রান্ত বসন্ত ঘরে আগন্তুকের প্রবেশ প্রতিহত করতে চাইলেও পারেনা মাসির কঠোর শাসনে। দীর্ঘ একমাস এই রোগে ভোগার পর সে বসার শক্তি পেলে সেদিন নিতাইয়ের বুকে মাথা রেখে সেখানেই প্রাণ ত্যাগ করে। নিতাই এর মনে পরে যায় তার বাধানো গানটা – জীবন এতো ছোট কেনে?
বসন্তের মৃত্যুতে নিতাই শোকাচ্ছন্ন হয়ে পরে। তার প্রতীক্ষায় থাকে। হয়তো ভ্রমে আসবে। পরবর্তীতে নিতাই কষ্টে কাশীতে চলে গেলে সেখানেও তার মন টিকল না। সে বাংলাদেশের সন্তান। ভীনদেশি ভাষা তার জানা নাই। সে আবার চলে আসে রাজনের কাছে। কিন্তু এসে রাজনের কাছে যা শুনলে, তার জন্য সে বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলো না। রাজনের চোখে জল। রাজন কে বলে; গান শোন রাজন, গান শোন
“এই খেদ মোর মনে মনে।
ভালোবেসে মিটল না আঁশ_ কুলাল না এ জীবনে।
হায়, জীবন এত ছোট কেনে?
এ ভুবনে?”
আসলেই কি তাই? 
 

প্রসঙ্গ কবি -

তারাশঙ্করের কবি উপন্যাসের একটুখানি ইতিহাস আছে। কবি’র নায়ক নিতাইচরনের আসল নাম সতীশ। উপন্যাসে তার বংশ পরিচয় সব সত্য। পাঁচ সাত মাইলের মধ্যে যেখানেই কবিগান হত, মাথায় চাদর পেঁচিয়ে গায়ে জামা দিয়ে সে যেতোই এবং কবিয়ালদের সাথে সুরে সুর মিলিয়ে দোয়ারকি করতো।
তবে নিতাইচরনের সাথে ঠাকুরঝির বাস্তবে কোনো প্রেম ছিলো না। ঠাকুরঝি পাঁশের গ্রাম থেকে এসে দুধের জোগান দিত। আসত ঐ রেললাইন ধরে। সে দিত বেনে মামার দোকানে দুধের জোগান। সতিশ ও নিত এক পোয়া হিসেবে। বেনে-মামা অর্থাৎ বণিক-মাতুল। সেই স্টলে বসে থাকত লেখকের বাল্যকালের বন্ধু দিজপদ। সেই উপন্যাসে বিপ্রপদ। 
 
দিজপদ মাঝে মাঝে একখানি দড়ি পড়িয়ে উপহার দিত সতীশকে – নে মেডেল। কিন্তু সতীশ এই রসিকতাটুকু আদৌ সহ্য করতো না। চুপ করে থাকতো। কিন্তু দিজপদ বেজায় রকমের স্নেহ করতো সতীশকে।
রাজনের নাম রাজা মিয়া। সে হিন্দু না। যাতে মুসলিম। সে হিন্দি ও বলত না – যুদ্ধেও যায়নি এবং মেজাজেও মিলিটারি নয়। উপন্যাসে এ টুকু লেখকের কল্পনায় বোনা।
তবে ঠাকুরঝির সাথে সতীশের মাঝে মাঝে রহস্যালাপ হত। মিল ছিল বেশ। তা শুনত লেখক সাহেব লুকিয়ে লুকিয়ে। 
 
শান্টিং পয়েন্টের ধারে একটি কৃষ্মচূড়া গাছ আছে। সেখানে শুয়ে কিংবা বসে থাকতো লেখক প্রায়ই। সেখান থেকে লেখক ঠাকুরঝির সাথে নিতাইয়ের রসিকতা শুনত অন্তরাল থেকে। এই কটিই চরিত্র নিয়েই। বলা বাহুল্য, লেখকের সাথে সতীশের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল।
কবি উপন্যাসটি প্রথমে ছিল গল্প। ঠাকুরঝি অসুস্থ হলে সে নিজের প্রতি তার আকর্ষক অনুভব করলে চলে যায়। এই ছিলো কবি গল্পের সমাপ্ত।
প্রথমে ঝুমুরদলের নাম গন্ধ কিছুই ছিল না। পরবর্তীতে লেখক ঝুমুরদল সম্পর্কে জানতে বেশ আগ্রহী হয়ে পড়ে। ঝুমুরদলের নারীরা অধিকাংশই প্রেমের ছলনায় ভুলে গৃহত্যাগ করে। পাপের রাজ্যে এসে ডুবে মরে যায়। 
 
তাঁদের এলাকায় একবার ঝুমুরদল এলে সেখানকার একটি মেয়ের হলো কলেরা। সেই উপন্যাসের বসন। সে সময় লেখক দেশের সেবা করে বেড়ায়। সে অসুধ দিলে বসন ঠিক হয়ে যায়। পরে লেখককে বসনের ভালোবাসার মানুষ গিয়ে খবর দিলে; লেখককে সে প্রণাম করে। বললে; আপনি না থাকলে মরে যেতাম বাবু, এরা হয়ত জ্যান্তই ফেলে পালাত, আমাকে শেয়াল কুকুরে ছেঁড়ে খেয়ে দিত।
এইসব নিয়েই তারাশঙ্করের কবি উপন্যাস। লেখক উপন্যাসে সতীশের কবিয়াল থেকে কবিতে রূপান্তর হওয়া ও ঝুমুরদলের জীবন ইতিকথাই তুলে ধরেছেন।

শেষ কথা

তারাশঙ্করের লেখা কবি উপন্যাসখানা আমার জীবনে পড়া শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এটি বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী একটি উপন্যাস। প্রত্যেক পাঠকের তারাশঙ্করের লেখা এ উপন্যাসখানা পড়া উচিৎ। 
 

কবি উপন্যাস পিডিএফ ডাউনলোড 

কবি উপন্যাসটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে নিচের ডাউনলোড লেখায় ক্লিক করুন। 
 

Post a Comment

0Comments

এই পোস্টটি বিষয়ে আপনার যদি কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করুণ। অতি দ্রুত রিপ্লাই পাবেন।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!